Wellcome to National Portal
মেনু নির্বাচন করুন
Main Comtent Skiped

ভাষা ও সংস্কৃতি

শ্রীনগর উপজেলার প্রান্তসীমানায় অবস্থিত বাড়ৈখালী জনপদটি অত্যান্ত প্রাচীন। তাই এই এলাকার সংস্কৃতিও অত্যান্ত সমৃদ্ধ। এখানে শুধু মাত্র হিন্দু এবং মুসলমান সম্প্রদায়ের বসবাস। অধিবাসীদের সবাই বাংলা ভাষাভাষি এবং উচ্চারণে প্রত্যেকের মধ্যেই একটা বিক্রমপুরের টান লক্ষ্য করা যায়।

এলাকাটি একসময় হিন্দু প্রধান ছিল। সে সময় মুসলমান ছিল হাতে গোনা- কিন্তু কালের পরিবর্তনে হিন্দুরা এখন সংখ্যালঘু এবং মুসলমানরা সংখ্যা গড়িষ্ঠ। তবে হিন্দুদের সেই আভিজাতে্যর স্বাক্ষর এখনো যত্রতত্র বিদ্যমান। তাদের উৎসব গুলো এখনো এই এলাকায় ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকেই উদযাপন করে থাকে। বর্ষাকালে নৌকাবাইচ, দূর্গাপূজা, কালীপূজায় সব ধর্মের মানুষেরই সমাগম ঘটে। তখন সমগ্র এলাকাই যেন উৎসব মূখর হয়ে উঠে। এলাকায় বিভিন্ন মেলা হয়। কালী পূজা উপলক্ষ্যে মেলাসহ নানা ধরনের মেলাগুলোতে ব্যপক লোক সমাগম হয় এগুলো দিন দিন আরো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এবং অবশ্যই এই পার্বনগুলো আমাদের গ্রাম বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠেছে।

 

ঈদ উৎসব ছাড়াও প্রতিটি ঋতুতেই কোন না কোন উৎসব অনুষ্ঠান এই এলাকার মানুষ খুই উৎসাহ উদ্দিপনার সাথে উদযাপন করে থাকে। নববর্ষ, হালখাতা, নবান্ন, দোলযাত্রা, পূর্নিমা, বৌদ্ধপূর্নিমা ইত্যাদি। এলাকায় রাজনৈতিক কোন সংঘাত নেই। নানামতের একত্রে সহবস্থান উল্লেখ করার মত। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনুপম উদাহরণ আমাদের এই বাড়ৈখালী এলাকাটি। জাতীয় দুর্যোগের সময়ও এখানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ক্ষুন্ন হয়েছে এমন কোন উদাহরণ সূদীর্ঘ অতীত ঘাটলেও পাওয়া যাবে না।

প্রতি বছর এলাকার ক্লাব সংগঠন গুলো শীত কালে বার্ষিক নাট্যানুষ্ঠানের আয়োজন করে থাকে। এই নাটম মঞ্চায়নের আয়োজনটি হয়ে আসছে ১৯৩৭ সালের পর থেকে। বার্ষিক নাটক গুলোতে ব্যপক খরচ করা হয় এবং জাতীয় পর্যায়ের সাংস্কৃতিক অংগনের বিভিন্ন ব্যকিত্ এতে অংশ নিয়ে থাকেন। এছাড়াও প্রতি বছর জাতীয় দিবসগুলোও বেশ জাকজমক ভাবে উদযাপিত হয়ে থাকে। সাংস্কৃতিক চর্চায় বাড়ৈখালীর ঐতিহ্য এই এলাকায় সবচাইতে পুরানো।

 

খেলাধুলায় এই এলাকার সুনাম ইর্ষনীয়। প্রতি বছর এলাকার ক্লাব সংগঠন গুলো, সেবক সংঘ, প্রগতি সংসদ, ডায়মন্ড ক্লাব, পূর্বাচল সংসদ ফুটবল এবং ক্রিকেট টুর্ণামেন্টের আয়োজন করে থাকে। এ বছর প্রগতি সংসদে আয়োজিত হল ‘‘মনসুর-উল-করীম স্মৃতি গোল্ড কাপ ফুটবল’’ এর ফাইনাল খেলা- জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আনিমুল ছাড়াও বেশ কয়েকজন নামী দামি পরিচিত মুখের ফুটবল খেলোয়ার এতে অংশ নিয়েছিল।

 

গত কয়েক বছর যাবৎ সেবক সংঘ আয়োজন করে আসছে-মোটর সাইকেল এবং টেলিভিশন পুরস্কারের ফুটবল টুর্ণামেন্ট। খুবই জমজমাট এবং উৎসব মূখর হয় সেই খেলাগুলো।

 

বাড়ৈখালী এলাকায় বিভিন্ন পার্বনে পিঠাপুলি তৈরি করা হয়-সেই রকমারী পিঠার যে স্বাদ এবং বৈচিত্র তা বিক্রমপুরের অন্য কোন এলাকায় নেই। এ সময় এলাকার সংস্কৃতি অনুযায়ী-শ্বশুর বাড়ী থেকে মেয়েরা বাবার বাড়ি নাইয়রে আসে। তাদের জন্য এবং জামাই ষষ্ঠীর দিনে জামাই বাবুর জন্য আয়োজন করা হয় রকমারী রান্না এবং খাবার দাবারের এই ঐতিহ্য চলে আসছে সুদীর্ঘ কাল যাবৎ।

 

সুতরাং বলা চলে বাড়ৈখালী এলাকার দীর্ঘ ও প্রাচীন এক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে এবং তারই ধারাবাহিকতায় এই এলাকার মানুষ সকল ধর্মবর্ণ মিলেমিশে একত্রে বসবাস করে আসছে। এই সম্প্রীতির উৎস সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য যা এলাকায় বাড়ৈখালী জনপদটি উদাহরণ হতে পারে